জমজমের পানি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
সম্মানিত পাঠক আজকে আমরা এই আর্টিকেলটিতে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম একটি কূপ সম্পর্কে আলোচনা করব যে পানি পান করলে রোগীর রোগ নিরাময় হয় যে কূপের পানি পান করলে অন্তর শীতল হয়ে যায়। সে বিষয়ে সকল তথ্যাবলী তুলে ধরবো ইনশাল্লাহ। আর সেই কূপটি হচ্ছে জমজম কুপ। আমরা আলোচনা করব যে জমজম কোথায় অবস্থিত, এর ইতিহাস, জমজম কূপের পানি ফজিলত, খাওয়ার নিয়ম সবকিছুই আমরা এই আর্টিকেলটিতে তুলে ধরবো আসা করি সবার ভালো লাগবে।
জমজমকূব কোথায় অবস্থিত
হারাম শরিফের পাশে অবস্থিত জমজম কূপ। পবিত্র কাবা ও এই কূপের মধ্যে দূরত্ব মাত্র ৩৮ গজের। জমজম ইব্রাহিম (আ.) এর ছেলে ইসমাঈল (আ.) এর স্মৃতিবিজড়িত কূপ।হজ ও ওমরা আদায়কারীদের জন্য এবং পৃথিবীর মানুষের জন্য জমজমের পানি পান করা মুস্তাহাব। সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে নবীজি (সা.) নিজে জমজম থেকে পানি পান করেছেন। -(সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫৫৬)
জমজম কূপের ইতিহাস
ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম যখন তার স্ত্রী হাজেরা ও ছেলে ইসমাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মরুভূমিতে রেখে চলে যান তখন ইসমাইল আলাইহিস সালাম পানির জন্য কাতরা ছিলেন তখন তার মা হাজেরা আশপাশে ছুটা ছুটি করতে লাগলেন পানির জন্য। পরে তিনি ফিরে এসে দেখেন যে তার ছেলের পায়ের আঘাতে একটা কূপ তৈরি হয়েছে। সেদিন এটার নামকরণ করা হয় জমজম যায় ইসমাইল আলাইহিস সালামের পায়ের আঘাতে সৃষ্টি হয়েছিল।
জমজম কূপের পানি ফজিলত
হজরত আবু জর (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘জমজমের পানি বরকতময়, স্বাদ অন্বেষণকারীর খাদ্য।’ -(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৪৭৩)
মুসনাদে তায়ালুসিতে এই হাদিসের একটি বর্ধিত অংশ উদ্ধৃত হয়েছে, ‘এবং রোগীর ওষুধ।’ আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজের সঙ্গে পাত্রে ও মশকে করে জমজমের পানি বহন করতেন। তা অসুস্থদের ওপর ছিটিয়ে দিতেন এবং তাদের পান করাতেন। (সুনানে তিরমিজি)
জমজম কুপের পানি পান করার নিয়ম
জমজম থেকে পানি পানকারীর আদব হচ্ছে যে তৃপ্তি সহকারে পান করা। অনেকে আবার জমজমের পানি পান করার কিছু নিয়ম দিয়েছে যেমন কেবলামুখী হাওয়া, করা বিসমিল্লাহ বল, তিন নিঃশ্বাসের পান করা, পরিতৃপ্ত হওয়া, শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা ইত্যাদি। জমজমের পানি পান করার সময় একটি বড় কাজ হলো দোয়া করা।ইবনে আব্বাস (রাঃ) যমযমের পানি পানের পূর্বে এই দোয়া পড়তেন,
‘اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ عِلْمًٍا نَافِعًا ، وَرِزْقًا وَاسِعًا ، وَشِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ.
– হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান, বিস্তৃত সম্পদ, ও সকল রোগ থেকে শেফা কামনা করছি
জমজম কুপের পানি পান করার নিয়ম
স্বাভাবিকভাবে দাঁড়িয়ে পানি পান করা মাকরু সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম নিজেই জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করেছেন এবং তার সাহাবীদের দাঁড়িয়ে পান করা সম্পর্কে সম্পর্কিত হাদিস পাওয়া যায়। যা প্রমাণ করে দাঁড়িয়ে পানি পান করা হারাম বা মাকরূহে তাহরীমি নয়।
হজরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করেছেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২০২৭)
জমজম কূপের পানির উপকারিতা
জমজমের পানির গুণাগুণ ও উপকারিতার বিষয়টি চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রমাণিত। তারপরও এ পানির একটি বিশেষ উপকারিতা আছে। এ পানি পানে নিয়ত অনুযায়ী উপকারিতা পায় মুমিন। হাদিসে এসেছে–
হজরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, জমজমের পানি যে উপকার পাওয়ার আশায় পান করা হবে; তা অর্জিত হবে বা সে উপকার পাওয়া যাবে।’ (ইবনে মাজাহ)
জমজম কূপের পানি ইসলামী ধর্মে বিশেষ মর্যাদা ও গুরুত্ব রাখে। এটি মক্কার পবিত্র কাবা শরীফের কাছে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক কূপ, যা হজরত ইসমাইল (আ.) ও তাঁর মা হজরত হাজেরা (আ.)-এর সময় থেকে আজ পর্যন্ত ব্যবহৃত হচ্ছে। জমজম কূপের পানি বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে যুক্ত এবং এতে বেশ কিছু চিকিৎসা উপকারিতা বলে মনে করা হয়। নিচে জমজম কূপের পানির কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
1. আত্মিক এবং মানসিক শান্তি: মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী, জমজম কূপের পানি পান করলে আত্মিক শান্তি এবং মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়। এটি মানুষের উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা এবং অবসাদ দূর করতে সহায়তা করে।
2. শক্তি ও শক্তিবৃদ্ধি: অনেকেই মনে করেন, জমজমের পানি পান করলে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পায়। এটা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার জন্য উপকারী হতে পারে এবং অনেকের মতে, এটি শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে পুনরুজ্জীবিত করে।
3. অস্তিত্বগত সুস্থতা: মুসলিমদের মধ্যে জমজম পানি একটি ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় গুরুত্বের কারণে ব্যবহৃত হয়। এটি রোগের চিকিৎসা, বিশেষ করে পেটের সমস্যা, কিডনি সমস্যা এবং বিভিন্ন ধরনের অগ্ন্যাশয় রোগে সাহায্য করতে পারে বলে বিশ্বাস করা হয়।
4. আল্লাহর আশীর্বাদ: জমজম কূপের পানি একে “আল্লাহর রহমত” হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইসলামে বিশ্বাস করা হয় যে এই পানি পান করলে আল্লাহর আশীর্বাদ লাভ হয় এবং মানুষের জীবন সহজ ও সমৃদ্ধ হয়।
5. অবস্থানগত সুফল: জমজমের পানি যেখানে উৎসারিত, সেই স্থানের পবিত্রতা ও ধর্মীয় গুরুত্ব অনেককেই শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্তিশালী করে বলে বিশ্বাস করা হয়। হজরত ইসমাইল (আ.)-এর সময় থেকে এই পানি জীবিকা ও শক্তির উৎস হিসেবে পরিচিত।
6. বিশুদ্ধতা এবং জীবাণু মুক্ত: জমজম পানি অত্যন্ত বিশুদ্ধ ও পরিষ্কার বলে মনে করা হয়। এর স্বাভাবিক জীবাণুমুক্ত গুণাবলী এবং প্রাকৃতিক উপাদানগুলো মানব শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে।
এছাড়া, অনেক মুসলমান এই পানির প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অনুভব করেন, এবং ধর্মীয় আচরণ হিসেবে তা পান করতে অভ্যস্ত। তবে, এর চিকিৎসাগত উপকারিতা সম্পর্কিত কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই, কিন্তু ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি পবিত্র পানি হিসেবে বিবেচিত।